Basirhat: তিন বছর আগে কুড়িয়ে পাওয়া বিপুল টাকা মালিককে ফেরালেন দরিদ্র মাছবিক্রেতা

 তিন বছর আগে কুড়িয়ে পাওয়া ৭০ হাজার টাকা নিজের কাছে যত্ন করে রেখে দিয়েছিলেন মাছ বিক্রেতা মহম্মদ আবু কাশেম গাজি। তিন বছর পর টাকার মালিকের খোঁজ পেয়ে সেই টাকা তাঁকে ফিরিয়ে দিলেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন: বসিরহাট দণ্ডিরহাটের নগেন্দ্রকুমার উচ্চ শিক্ষাতনের শিক্ষক চম্পক নন্দী। বছর তিনেক আগে বসিরহাট পুরাতন বাজারে গিয়েছিলেন কোনও কাজে। কিন্তু মনের ভুলে ফেলে এসেছিলেন টাকার ব্যাগ। অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও না পেয়ে পাওয়ার আশা একরকম ছেড়েই দেন তিনি। এমনকী, ভুলেও গিয়েছিলেন বিষয়টি।


কিন্তু একজন ভোলেননি। তিনি মাছবিক্রেতা আবু কাশেম গাজি। বসিরহাট তপারচর এলাকার বাসিন্দা। স্ত্রী, তিন ছেলে, বৌমা ও নাতিকে নিয়ে কাশেমের সংসার। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। ছেলে মনিরুলও তাঁর মতো বসিরহাট পুরাতন বাজারে মাছ বিক্রি করেন। সামান্য রোজগার। 

এ হেন কাশেম তিন বছর আগের ঘটনা স্মরণ করে জানান, সে দিন বাজারে খুব ভিড় ছিল। কাজের ফাঁকে হঠাৎই তাঁর নজরে পড়ে, একটি কাপড়ের ব্যাগ পড়ে আছে। কোনও খদ্দের মাছের ব্যাগ ফেলে চলে গিয়েছেন ভেবে নিজের কাছে ব্যাগটি তুলে রেখে দেন। তখন আর দেখার সময় পান না, ব্যাগে কী আছে! কিন্তু ব্যাগ ফেরত নিতে কেউ আসেন না! কী হবে? তখনই ব্যাগটি নিয়ে দেখেন তার মধ্যে টাকার বান্ডিল! 

সঙ্গে সঙ্গে তিনি খোঁজাখুঁজি করতে শুরু করে দিলেন। যদি কোনও ভাবে এমন কারও খোঁজ পাওয়া যায়, যাঁর ব্যাগ বা টাকা হারিয়েছে। কিন্তু, না! কাউকেই পেলেন না তিনি। অগত্যা ব্যাগের দাবিদার না পেয়ে বাড়ি নিয়ে ফেরেন সেটি। স্ত্রীকে ব্যাগটি সাবধানে রাখতে বলেন। স্ত্রী ব্যাগটি তাঁদের আলমারিতে রেখে দেন।

হঠাৎই তিন বছর পরে, কী মনে হতে ব্যাগটি আলমারি থেকে বের করে একবার খোলেন কাশেম। আর তখনই দেখেন, তার মধ্যে একটি দোকানের ক্যাশমেমো রয়েছে। যেটা আগে কোনও ভাবে তাঁর চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। কাশেম দেখেন ক্যাশমেমোটি একটি স্টেশনারি দোকানের। আর স্টেশনারি দোকানটি সেই টাকা-খোয়ানো চম্পক নন্দীদেরই। ব্যস! সঙ্গে সঙ্গে টাকার ব্যাগ নিয়ে আবু কাশেম হাজির হন ওই দোকানে, চম্পকবাবুর সঙ্গে দেখা করে তাঁর হাতে তুলে দেন সেটি।

এদিকে এমন ঘটনায় রীতিমতো স্তম্ভিত চম্পক নন্দী। তিন বছর আগে হারিয়ে ফেলা টাকার ব্যাগ তিন বছর পরে অক্ষত ফিরে পেয়ে আপ্লুত, তিনি। তিনি জানান, ব্যাগটি যেমন হারিয়েছিলেন, ঠিক তেমনই ফিরে পেয়েছেন। একটি টাকাও কম ছিল না! তিনি বলেন, 'আমি ভাবতে পারছি না, এমন মানুষ এখনও আছেন আমাদের সমাজে!'

আর স্বয়ং কাশেম কী বলছেন? 

এক গাল হেসে কাশেম বলেন, 'করোনার সময়ে তো অভাবে দিন কাটত, তার মধ্যে ঘরে এতগুলি টাকা, ভয়ে ভালো করে ঘুমোতে পারতাম না! এতদিনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। টাকার ব্য়াগ তার মালিকের হাতে তুলে দিতে পেরে নিশ্চিন্ত লাগছে।' 

কাশেমকে সংবর্ধনা দেন বসিরহাট থানার আইসি সুরিন্দর সিংহ। তিনি কাশেমের হাতে ফুলের স্তবক মিষ্টি ও পাঞ্জাবি তুলে দিয়ে বলেন, 'জীবনে প্রথম এমন মানুষ দেখলাম, যিনি কুড়িয়ে পাওয়া এতগুলি টাকা তিন বছর ধরে আগলে রেখে তারপর তা ফেরত দিলেন! অভাবের সংসারে এমন সততা বিরল! এমন সৎ মানুষ বড় বিরল।'



করোনাকালে দীর্ঘদিন লকডাউন ছিল। তার মধ্যে কাশেমের সামান্যই বিক্রি। অভাবের সংসার। কিন্তু তার মধ্যেও কুড়িয়া পাওয়া সত্তর হাজার টাকা যক্ষের ধনের মতো তিন বছর ধরে আগলে রেখেছিলেন তিনি! এহেন মানুষের সততায় গর্বিত তাঁর পরিবার, তাঁর প্রতিবেশীও। এখন কাশেমকে দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন সকলে। 

সৌজন্যে : জি ২৪ ঘণ্টা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Type Your Valuable Feedback.
Keep Supporting. Flow as on YouTube & Facebook.

নবীনতর পূর্বতন