ABORTION LAW : ভারতে গর্ভপাত কি বৈধ? মার্কিন মুলুকে তৈরি হওয়া বিতর্কের মাঝেই দেখে নিন

 গর্ভপাত আইন নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। সম্প্রতী মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাত সম্পর্কে বলেছে এটি সাংবিধানিক অধিকার ছিল না। প্রক্রিয়াটি ৫০ বছর পুরনো সিদ্ধান্তকে বাতিল করার কথাও বলেছেন। যা নিয়ে তুমুল বিতর্ক ও আন্দোলন শুরু হয়েছে। এই অবস্থায় দেখে নিন ভারতীয় দণ্ডবিধি বা আইন গর্ভপাত নিয়ে কী বলেছেন। 

ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩১২ নম্বর ধারার অধীনে বলা হয়েছে গর্ভপাত কোনও অপরাধ হিসেবে তখনই গন্য হবে না যখন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোনও মহিলার জীবন বাঁচানো যায়। একই সঙ্গে বেশি কিছু শর্তও আরোপ করা হয়েছে। MTP Act ( মেডিক্যাল টার্মিনেশন অব প্রেগনেন্সি আইন) এর অধীনে বলা হয়েছে গর্ভপাত করানো মহিলার গোপনীয়তা রক্ষা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মহিলার পরিচয় প্রকাশ করা উচিত্‍ নয়।


এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠতেই পারে ভারতীয় আইন অনুযায়ী গর্ভপাত কি বৈধ?


ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী গর্ভপাত বৈছষ প্রায় ৫০ বছর ধরে ভারতে গর্ভপাত বৈধ। তবে তা অবশ্যই শর্তসাপেক্ষে। ১৯৭১ সালের মেডিক্যেল টার্মিনেশন অব প্রেগন্যান্সি অ্যাক্টের অধীনে নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। MTP Act. মূলত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপায় হিসেবে প্রণীত হয়েছিল। যখন এই আইন লাগু করা হয়েছিল তখন গর্ভপাতের সীমাছিল গর্ভাবস্থার ২০ সপ্তাহের মধ্যে। তবে ২০২১ সালের একটি সংশোধনীর মাধ্যমে গর্ভপাতের সীমা ২০ সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ২৪ সপ্তাহ করা হয়েছিল।


ভারতীয় চিকিত্‍সা অনুযায়ী গর্ভপাতের শর্তঃ

১. যদি ২০ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভধারণ বন্ধ করতে কেউ চায় তাহলে তাকে একজন চিকিত্‍সকের পরামর্শ নিতে হবে।

২. যদি ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে হয়ে তাহলে ২ জন চিকিত্‍সকের মতামতের প্রয়োজন রয়েছে।

৩. গর্ভপাতের কারণে সংশ্লিষ্ট মহিলার জীবনে যদি ঝুঁকি থাকে তাহলে গর্ভপাত করা যাবে না।

৪. যদি বোঝা যায় পেটের মধ্যে থাকা শিশু শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে তাহলে গর্ভপাত আইনি হবে।

৫. মহিলা যদি যৌন নিপীড়ন, ধর্ষণের মাধ্যমে গর্ভাবতী হয়ে পড়েন তাহলে ২৪ সপ্তাহের মধ্যে গর্ভপাত করাতে পারবেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক বা শারীরিক প্রতিবন্দী মহিলা, মানসিক অসুস্থ মহিলাদের জন্য এই নিয়ম কার্যকর।

৬. সেই সময় যদি কোনও মহিলার বৈবাহিক অবস্থার পরিবর্তন হয় অর্থাত্‍ তিনি তাালকপ্রাপ্ত বা বিধাবা হন তাহলে বর্ধিত মেয়াদের সীমার মধ্যে গর্ভপাত করাতে পারবেন।


অন্যদিকে শিশু ভ্রূণের অস্বাভাবিকার কারণে গর্ভপাত আইনত সিদ্ধ। শিশুর জন্মগ্রহণ মায়ের জীবনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে- এমনটা হলে গর্ভপাত বেআইনি নয়। এই দেশে যুদ্ধ, মানবিক সংকট, জরুরি অবস্থার মত চরম পরিস্থিতিতে গর্ভাবতী হওয়া মহিলাদের জন্য গর্ভপাতের সীমা বাড়ান হয়েছে।


ভারতে অবিবাহিত মহিলাদের জন্য গর্ভপাত বৈধ। একজন বিবাহিত মহিলার জন্য উপরোক্ত শর্ত গুলি যদি মেনে চলা হয় তাহলে গর্ভপাতের জন্য স্বামীর অনুমতির প্রয়োজন হবে না। অন্যদিকে স্বামী কিন্তু কোনও মহিলাকে জোর করে গর্ভপাত করাতে বাধ্য ককতে পারে না। এমন পরিস্থিতিতে পারিবারিক হিংসার মামলা নথিভুক্ত করা যায়। গর্ভপাত ঘটনার জন্য স্বামীর বিরুদ্ধে মহিলা মামলা রুজু করতে পারে।


ভারত সরকার পাবলিক ন্যাশনাল হেলথ ইন্স্যুরেন্স ফান্ড, আয়ুষ্মান ভারত এবং এমপ্লয়িজ স্টেট ইন্স্যুরেন্সের অধীনে গর্ভপাত কভার করে। সরকার অস্ত্রোপচারের গর্ভপাতের জন্য ১৫৫০০ টাকা প্রদান করে যার মধ্যে পরামর্শ, থেরাপি, হাসপাতালে ভর্তি, ওষুধ, ইউএসজি বা ফলো-আপ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চিকিত্‍সা গর্ভপাতের জন্য, ১৫০০ টাকা পরামর্শ এবং USG প্রধানত প্রদান করা হয়। "গর্ভপাতের ছুটি" বৈধ করার জন্য ভারত বিশ্বের প্রথম দেশগুলির মধ্যে একটি, যা গর্ভপাতের জন্য প্রযোজ্য কারণ সেগুলি 'প্ররোচিত গর্ভপাত' হিসাবে গঠিত। ভারতে একজন মহিলা তার গর্ভপাতের দিন থেকে ছয় সপ্তাহের জন্য বেতনের ছুটি পাওয়ার অধিকারী।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Type Your Valuable Feedback.
Keep Supporting. Flow as on YouTube & Facebook.

নবীনতর পূর্বতন