নিউজ ডেস্ক: দোরগোড়ায় লোকসভা নির্বাচন ঠিক তার আগেই এই মুহূর্তে রাজ্য রাজনীতি সরগম যে বিষয়ে বা যাকে কেন্দ্র করে তিনি হলেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। পূর্ব ঘোষণা মতোই আজ ঠিক সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ মাননীয় রাষ্ট্রপতি এবং সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তার পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। গত রবিবার সংবাদ মাধ্যমের সামনে তিনি জানিয়েছিলেন মঙ্গলবার তিনি পদত্যাগ করবেন।এরপর রাজনৈতিক মহলে একটা জল্পনা তৈরি হয়েছিল যে তিনি বিজেপির হয়ে লোকসভা নির্বাচনে তমলুক থেকে প্রার্থী হতে চলেছেন তবে এই বিষয়ে তাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছিলেন মঙ্গলবার পদত্যাগের পর তিনি সাংবাদিক সম্মেলন করে সমস্ত রকম প্রশ্নের উত্তর দেবেন। পূর্ব পরিকল্পনা মতই পদত্যাগের পর মঙ্গলবার দুপুর আড়াইটা নাগাদ তিনি তার সল্টলেকের বাসভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অভিজিত গঙ্গোপাধ্যায় জানান তিনি বিজেপিতেই যোগ দিচ্ছেন আগামী ৭ মার্চ তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন তবে তিনি কোথা থেকে প্রার্থী হবেন সেই বিষয়ে কিছু স্পষ্ট না করে জানান দল ঠিক করে দেবে তিনি লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা এবং হলেও এই কোথা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন “আমি ভারতীয় জনতা পার্টিতে যোগ দিচ্ছি এবং এই যোগদান আমি শীঘ্রই করব। সম্ভবত ৭ তারিখ আমি বিজেপিতে যোগদান করছি তবে আমি কোন সিট থেকে লড়াই করব তার সিদ্ধান্ত নেবেন বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব। লড়ি বা না লড়ি আপাতত বিজেপিতে যোগদান করলাম।” এদিন বিজেপিতে যোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে প্রাক্তন বিচারপতি বলেন “বিজেপি একমাত্র দল যেটি সর্বভারতীয় এবং তৃণমূল কংগ্রেসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে।“
পদত্যাগ করার পরই বিজেপিতে যোগদান করে তৃণমূলকে কার্যত তুলোধোনা করলেন প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় একাধিক বিষয় নিয়ে তৃণমূলকে নিশানা করতে দেখা গেল প্রাক্তন বিচারপতিকে, পাশাপাশি তিনি এও জানালেন রাজ্যের শাসকদলের দুর্বৃত্ততাই রাজনীতির ময়দানে আসার অনুপ্রেরণা দিয়েছে।এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন “বিচারপতি থাকাকালীন শাসক দল আমাকে নানাভাবে অপমান করেছে শাসকদলের মুখপাত্ররা একাধিক বার আমাকে বিভিন্ন ভাষায় অপমান করেছেন” তাঁরা জানেন না বিচারপতিকে আক্রমণ করা যায় না। শুধু তাই নয়, জজকে উদ্দেশ্যে করে গালিগালাজ করেছেন। আসলে ওদের অনেক দুর্নীতি ফাঁস হয়ে যাচ্ছিল।” আরও বলেন “বড় বড় অনেক দুষ্কৃতী মন্ত্রী-আমলার ছদ্মবেশে লুকিয়েছিলেন। তাঁরা আপাতত জেলে আছেন, গড়াগড়ি খাচ্ছেন আমি জানি না।” তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে শোনা গেল অন্য সুর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্কে তিনি বলেন “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একজন প্রকৃত রাজনীতিবিদ বলে মনে করি এবং তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে সেটি একটি অর্থপূর্ণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে”। পাশাপাশি ব্যক্তি কুনাল ঘোষ সম্পর্কেও ইতিবাচক মন্তব্য শোনা গেল প্রাক্তন বিচারপতির মুখে, তবে একই মঞ্চ থেকে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কে কার্যত তীব্র আক্রমণ করলেন অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তার শিক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে দেখা যায় জাস্টিস গাঙ্গুলি কে।
এদিন তাকে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন “এই মুহূর্তে রাজ্যের রাজনীতিতে তৃণমূল বলে যে যে দলটি রয়েছে সেটি দুষ্কৃতিদের দল এটিকে কোন পলিটিক্যাল পার্টি বলে তিনি মনে করেন না” পাশাপাশি তিনি রাজ্যের শাসকদলকে ‘যাত্রাপার্টি’ বলে কটাক্ষ করলেন এবং বলেন “এই যাত্রার নাম ‘মা মাটি মানুষ’”।
তবে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে বিচারপতি পদ ত্যাগ করার পর নারদা কান্ড নিয়ে মুখ খুলতে দেখা গেল অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় কে তিনি নারদা কান্ড কে চক্রান্ত বলে মন্তব্য করেন। এবং এই প্রসঙ্গে তিনি নাম না করে তৃণমূলেরই অন্যতম পরিচিত নেতার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
আগামী ৭ তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তিনি লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা। তা তো সময় বলবে। তবে তিনি বলেন শিক্ষিত মানুষের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন। তিনি সমস্ত শিক্ষিত মানুষকে রাজনীতিতে আসার আহ্বান জানাবেন বলেও এদিন জানিয়েছেন বিচারপতি। বিচারপতি থাকাকালীন তার এজলাসে একাধিক দুর্নীতি মামলার গুরুত্বপূর্ণ রায় দিয়ে সাধারণ মানুষের একটা ভরসার মুখ হয়ে উঠেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতির ময়দানে পা রাখতে চলেছেন তিনি। তার এই রাজনৈতিক পথ মানুষকে কতটা ভরসা দিতে পারে সেদিকেই চোখ থাকবে সকলের।