কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস রেল দুর্ঘটনা সম্পর্কে দাবি আইএসএফ চেয়ারম্যান মোহাঃ নওসাদ সিদ্দিকীর

নিজস্ব সংবাদদাতা: ২০১৬-১৭ সালে কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক দুর্ঘটনা কমিয়ে শূন্য আনার শপথ নিয়েছিল। সেই ‘শপথের’ গালভরা নাম ছিল ‘মিশন জ়িরো অ্যাক্সিডেন্ট’। তার পর থেকে ৭ বছর অতিবাহিত। রেলের দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান বলছে, প্রথমে বছর দুয়েক মিশন মোটের ওপর ঠিকঠাক চললেও, গত চারবছরে এই 'মিশন' সম্পূর্ণ বেলাইন হয়ে গিয়েছে। ‘শূন্য’ হবার বদলে রেল দুর্ঘটনা বেড়ে গেছে। বেড়েছে হতাহতের সংখ্যাও। গত চারবছরে ভারতে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ২৬টি রেল দুর্ঘটনা ঘটেছে। 

সোমবার সকাল ৯টা নাগাদ শিয়ালদহ গামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ফাঁসাদেওয়ার রাঙাপানি স্টেশনের কাছে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। পেছন থেকে একটি মালগাড়ি এসে ধাক্কা মারে। এখনও পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত ৪০ জনেরও বেশি। আমরা মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্যের কামনা করছি। ঠিক একবছর আগে ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা এখনও আমাদের স্মৃতিতে টাটকা আছে। প্রায় ৩০০ জন মারা গিয়েছিলেন। আহত হয়েছিলেন ১২শো জনের মতন। বালেশ্বরের দুর্ঘটনায় সিগন্যালিং ত্রুটির কথা বলা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে আজকের দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও ঐ একই ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে। 

আমরা অবাক হয়ে দেখছি কিভাবে গোটা ভারতবর্ষ জুড়ে রেল ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। যে রেল একসময় ছিল কর্মসংস্থানের অন্যতম উৎস, সেখানে বছরের পর বছর লোক নেওয়ার জন্য কোন   পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না। এতবড় নেটওয়ার্ক চালাতে অনেক কর্মীর দরকার। কিন্তু সরকার কর্মী সঙ্কোচনের পথে যাচ্ছে ও রেলসংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্র বেসরকারীকরণ হচ্ছে। রেলের প্রচুর পদ খালি পড়ে আছে। অবিলম্বে এই পদগুলি পূরণ করা প্রয়োজন। আমাদের দাবি, রেলের মতন জাতীয় সম্পদকে বেসরকারী হাতে তুলে দেওয়া চলবে না। আমরা জানি দেশের অন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থা হল রেল। সুতরাং রেলের এই বিস্তৃত নেটওয়ার্ক যাতে ত্রুটিমুক্ত থাকে সেই ব্যাপারে রেল মন্ত্রককে সদাসতর্ক থাকা উচিত। আমাদের আরো দাবি, আগের মতন রেলের জন্য পৃথক বাজেট লোকসভায় পেশ করা হোক। সাধারণ বাজেটের সঙ্গে রেল বাজেটকে জুড়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার রেলের মতো মন্ত্রকের গুরুত্ব কমিয়ে দিয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়। 

রেল সূত্রেই জানা গেছে, বেশি ভাড়ার প্রিমিয়াম ট্রেনের বিলাস আর স্বাচ্ছন্দ্যে নজর দিতে গিয়ে কম ভাড়ার ট্রেনগুলির প্রাথমিক সুরক্ষা নিয়ে উদাসীন হয়ে পড়ছে রেল। কেন্দ্রের বিজেপি সরকার জুমলাবাজী করে বন্দে ভারতের মতো ট্রেন চালু করেছে যার ন্যূনতম ভাড়া ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা। সেই জন্যই কম ভাড়ার ট্রেনগুলির প্রতি কোন যত্ন নেই। আশ্চর্যের বিষয়, রেল মন্ত্রকের কোন রিসার্চ অ্যান্ড ডেভালপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট নেই। অথচ  ‘জ়িরো অ্যাক্সিডেন্ট’ মিশনের ঘোষণা করে রেল বলেছিল, এখন থেকে রেল গুরুত্ব দেবে নিয়মিত রেললাইন রক্ষণাবেক্ষণে। জোর দেবে রেল সুরক্ষার আধুনিকীকরণে। বলা হয়েছিল দুর্ঘটনা এড়াতে সিগন্যালিং সিস্টেমের উন্নতি করা হবে। কিন্তু পরিকল্পনাই সার। পরিস্থিতির কোন উন্নতি তো হয়ইনি, বরং অবনতি হতে শুরু করেছে। এই রেল দুর্ঘটনাগুলি তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে।

৫-১০লক্ষ টাকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে রেলমন্ত্রক হাত ধুয়ে বসে থাকতে পারে না। রেল সহ সমস্ত জাতীয় সম্পদকে বেসরকারীকরণের জন্য কেন্দ্রের বিজেপি জোট সরকারের চক্রান্তের বিরুদ্ধে অবিলম্বে গর্জে উঠতে হবে। শুকনো কথায় চিঁড়ে ভিজবে না। কেন্দ্রীয় সরকারকে বাধ্য করতে হবে রেলে শূন্যপদে কর্মী নিয়োগের জন‌্য, বাধ্য করতে হবে যাত্রী সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের, বাধ্য করতে হবে রেলের আধুনিকীকরণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের। 

Monisha Roy

মনীষা রায়। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ছাএী।পরবর্তীতে জার্নালিজম নিয়ে পড়াশোনা ।দেশভাগের সাহিত্য আলোচনা।মাঝেমধ্যে একটু আকিবুকি কাটা পাশাপাশি ছন্দ মিলিয়ে কবিতা লেখা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Type Your Valuable Feedback.
Keep Supporting. Flow as on YouTube & Facebook.

নবীনতর পূর্বতন