বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ফাঁসিদেওয়া ব্লকের মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলির মধ্যে নির্মলজোত অন্যতম। জালাস নিজামতারা পঞ্চায়েতের এই গ্রামে শ’দেড়েক পরিবারের বাস। অধিকাংশই কৃষিজীবী। গ্রামবাসীরা সকাল থেকে ঈদ নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। বৃষ্টি ও মেঘলা আকাশ উপেক্ষা করে মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়েছিলেন পুরুষরা। মহিলারা বাড়িতে নামাজ পড়ার পর খাওয়াদাওয়ার আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন। সকাল ৮টার মধ্যে নামাজ শেষ হওয়ার পর বাড়িতে বাড়িতে শুরু হয়েছিল কুরবানির প্রস্তুতি।
রেললাইনের পাশে একটি বাড়ির বধূ নাসমিন পারভিন বলছিলেন, ‘দুপুরে বাড়িতে বিরিয়ানি ও কষা মাংস হওয়ার কথা ছিল। কুরবানির মাংস প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের মধ্যে কীভাবে বণ্টন হবে, সেই পরিকল্পনা চলছিল। হঠাৎ বাজ পড়ার মতো পর পর বিকট আওয়াজ সবাই শুনতে পেলাম। রেললাইনের দিকে তাকিয়ে দেখি, একটি ট্রেনের উপর উঠে গিয়েছে আর একটি ট্রেন।’আর এক গৃহবধূ মর্জিনা খাতুন বলেন, ‘নামাজ পড়ার পর সকালের খাবার তৈরি করি। বাড়িতে মেয়ে ও বাচ্চা সাজগোজে ব্যস্ত ছিল। আমি রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আচমকা বাড়ির বাইরে চিৎকার-চেঁচামেচি। সব ফেলে রেললাইনের দিকে ছুটে গেলাম। পরবের আনন্দ বাদ দিয়েছি। মৌলবীরাও কুরবানি স্থগিত রেখে ঘটনাস্থলে যেতে বললেন। আর বাড়ির পুরুষরা তো সারাদিন ওখানেই জান লড়িয়ে উদ্ধার করল মানুষকে। আর আমরা বাড়ি থেকে দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে গেলাম জল ও খাবার নিয়ে।’ রেজিতন বেওয়া, খোকন মিঞা, মহম্মদ রসিদ বা মহম্মদ জাহিদরা বলছিলেন, ‘ঈদ নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ছিল। সবটাই আপাতত স্থগিত। গ্রামের কেউ না হলেও তাঁরা আমাদেরই স্বজন। এমন পরিস্থিতিতে আমরা উৎসব করব, তা হয় না।’