নিউজ ডেস্ক - একদিকে বিজেপির বাংলা বনধ আবার অন্য দিকে তৃণমূলের প্রতিষ্ঠা দিবস। আর বিজেপি তৃণমূলের দ্বন্দ্বের মধ্যে মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস মঞ্চে উপস্থিত হয়েছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সকলেই।
আর সেই মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,"কখনও-কখনও মানুষকে সহ্য করতে হয়। এখনও সহ্য করছি। ধৈর্য্য ধরছি। সীমা ছাড়ালে আমি কী করতে পারি তা কেউ জানেন না আপনারা। কারণ ‘I am the product of Movement’।আগামী শুক্রবার কলেজের গেটে ফাঁসির দাবিতে ছাত্র ছাত্রীরা আন্দোলন করবেন। আমি সব ব্লককে অনুরোধ করব ফেক ভিডিয়োর কাউন্টার করুন। পুলিশকে জানান। ব্লক প্রেসিডেন্টদের বলব, শনিবার সব ব্লকে মিছিল হবে। ধরনা হবে। বেলা দুটো থেকে ছটা পর্যন্ত ধরনা হবে। ১ সেপ্টেম্বর মেয়েরা ধরনা আন্দোলন করবেন ব্লকে ব্লকে। ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে।আমি বাংলাকে অসম্মান করতে দেব না। আমায় অনেক গালাগালি দিয়েছেন। অনেক অসম্মান করেছেন। আমি অনেক ভেবেছি। তবে দেখলাম আমি এদের বিরুদ্ধে কখনও বদলা নিইনি। আমরা বলেছিলাম এদের বিরুদ্ধে বদল চাই বদলা নয়। আজ বলছি, যেটা করার দরকার সেটা আপনারা ভাল বুঝে করবেন। আমি অশান্তি চাই না। তবে, কুৎসা অপপ্রচার চক্রান্ত করে যে আপনাকে রোজ কামড়াচ্ছে আপনি তাঁখকে কামড়াবেন না। তবে ফোঁস তো করতে পারেন। আপনারা ফোঁস করতে শিখুন।কেউ কেউ মনে করছেন এটা বাংলাদেশ। আমি ওদের ভালবাসি। ওদের সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতি এক। তবে এটা আলাদা রাষ্ট্র। আমাদের একটা আলাদা রাষ্ট্র। বাংলায় যদি আগুন লাগান কোনও রাজ্যই থেমে থাকবে না। আপনার চেয়ার টলোমোলো করব।কেউ কেউ মনে করছেন এটা বাংলাদেশ। আমি ওদের ভালবাসি। ওদের সংস্কৃতি আমাদের সংস্কৃতি এক। তবে এটা আলাদা রাষ্ট্র। আমাদের একটা আলাদা রাষ্ট্র। বাংলায় যদি আগুন লাগান কোনও রাজ্যই থেমে থাকবে না। আপনার চেয়ার টলোমোলো করব।আজও জুনিয়র ডাক্তারদের মিছিল আছে। আমি চাই ভালভাবে করুক। তবুও আমি বলব আপনাদের অনেক মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মারা গিয়েছে। এরা গরিব লোক। বড়লোকরা প্রাইভেট হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট করতে পারে। গরিবরা পারে না। ওরা কোথায় যাবে? আপনারা আন্দোলন করেছেন। আমি কোনও ব্যবস্থা নেব না। আমি আস্তে আস্তে বলছি আপনার এবার কাজে যোগদান করুন। কারণ সুপ্রিম কোর্ট সেদিন রাজ্যকে পাওয়ার দিয়েছে অ্যাকশন নিতে। আমি এটা করতে চাই না। কারণ ওরা ভাল করে পড়াশোনা করুক। আমি কারোও বিরুদ্ধে এফআইআর করি, তার জীবন শেষ। পাসপোর্ট, ভিসা পাবেন না। আমরা একমাত্র সরকার, যারা রাত্রিসাথী তৈরি করেছি ডাক্তারদের জন্য। এর আগে চিকিৎসার কী অবস্থা ছিল জানেন।পুজো শেষ হলে নির্বাচন করাব। আমিও ছাত্র রাজনীতি করেছি। বক্সীদা জানে। আমায় একটা রেস্ট্রোরেন্ট না বাঁচালে মেরে ফেলত।"
এরই সাথে তিনি আরও বলেন ,"যখন জুনিয়র চিকিৎসকরা দেশজুড়ে কর্মবিরতি করছিলেন তখন আমরা অ্যাকশন নিইনি। তার কারণ আমি মনে করছি ওদের আন্দোলন সঙ্গত। ওরা ওদের বন্ধুর বিচার চাইছে। কিন্তু দিল্লিতে ওরা ডাক্তারদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে দিয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট বলেছিল এখনও পর্যন্ত যাঁরা কাজে যোগদান করেননি কিছু বলবেন না পরে রাজ্যের উপর ছাড়লাম। আজ কত দিন হল? কর্মবিরতি চলছে? আমি নির্যাতিতার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। পাশে আছি বলেছি। আমি শুধু বলেছিলাম, ‘আমায় পাঁচদিন সময় দিন’। তার মধ্যেই বিচার হয়ে গেল। ওরা বিচার চায় না। কেস জলে ফেলে দিল। সিবিআই অর্ডার পেয়েছে? আজ ষোলো দিন হল কোথায় গেল বিচার? বিচার চাইতে হবে। বলতে হবে, ‘বিচার চাই-বিচার চাই-জবাব দাও সিবিআই’।কালকে যারা মেরেছে তাদের শাস্তি হোক। কোর্ট কী করবে জানি না। বিজেপি বললেই কোর্ট ছেড়ে দেয়। মানুষ কী করবে সবাই জানে। তবে আমি মানুষকে বলব না আইন হাতে তুলে নিক। আমি পরের সপ্তাহে স্পীকারকে বলে অ্যাসেম্বলি কল করব। এবং আমরা পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার পক্ষ থেকে আগামী দশ দিনের মধ্যে ‘ধর্ষকের ফাঁসি চাই’, এই বিল পাশ করে রাজ্যপালের কাছে পাঠাব। আমি জানি রাজার পাঠ। রাজাবাবু কিছু করবে না। না করলে মেয়েরা রাজভবনে গিয়ে বসে থাকবেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই বিল সই করতে হবে। আর রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়ে দায়িত্ব সারলে হবে না। আপনি আবার বড় বড় কথা বলেন কী? আপনার রাজভবনের মহিলা কর্মীকে নির্যাতন করেন। সে বিচার পায়নি। তাঁকে সরিয়ে নিয়েছি। ট্রমাটাইজ হয়ে যায়। থাকার জায়গা করে দিয়েছি।কালকে কারা এসেছিল আন্দোলন করতে? ছাত্র-ছাত্রীরা? নাকি গার্জেন টু কল? ছাত্র-ছাত্রীরা কেউ তোমারদের সঙ্গে নেই। শুভ বুদ্ধিরা নেই। বাংলার লোক হলে নবান্ন চেনে না? রাজভবন চেনে না? আমি কালকে দেখলাম রাজভবনের দক্ষিণ গেটেও ঢিল মেরেছে। এরা কারা? এরা কোথা থেকে এসেছে? বাংলা সবাইকে ভালবাসে। তবে কেউ যদি মনে করেন বাইরে থেকে এসে বাংলাকে অচল করবেন, অশান্ত করবেন তারা মনে রাখবেন বাংলার মৃত্যু নেই।"
এখানেই শেষ নয় তিনি বলেন ,"এখন সাইবার ক্রাইম হল মেইন অপরাধ। এই কী করেছে জানেন? আমার গলা না, আমার গলা দিয়ে কিছু বক্তব্য রাখবে। তখন দেখবেন অগ্নিগর্ভ হয়ে গিয়েছে। আমরা এমন কাজ করি না যা মানুষের পক্ষে নয়।কামদুনির কেসে ফাঁসি চেয়েছিলাম। হাইকোর্টের রায়ে দুজনের যাবজ্জীবন হয়। এখনও আমার কাছে ফাইল আসে যাতে ১০ বছর ১২ বছর হয়ে গেছে তাদের ছেড়ে দেওয়া হোক। আমার প্রশ্ন যে ধর্ষণকারী, যা খুনী তাকে কেন ছেড়ে দেওয়া হবে? আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করলাম। আবেদন জানালাম। আপনি একটা ন্যায় সংহিতা তৈরি করেছেন তাতে দশ বছর-বারো বছর-ষোলো বছর-তারপর আরও একটা ধাপ। কেন? এই ন্যায় সংহিতা বানানোর কী দরকার ছিল? যাঁরা ধর্ষক তাদের একমাত্র শাস্তি ফাঁসি-ফাঁসি ফাঁসি আর কিছু না। এই একটা কাজে সব ঠান্ডা হবে। কিছু কিছু মোদী মিডিয়া প্রমোট করছে। আৎ সোশ্যাল মিডিয়ার বিরোধী নই। তবে অপপ্রচার করা হয়।অভিষেক বলল আমাদের পুলিশ সময় পেয়েছে চারদিন। আমি ঝাড়গ্রাম গেছি। আমার কাছে খবর যায়। তখন ইতিমধ্যে তার পরিবার পৌঁছে গিয়েছে। পুলিশ কমিশনার পৌঁছে গিয়েছে। যা যা করণীয় সব করেছি। দেখুন দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটেছে। তবে তারপর যা যা করতে পারা যায়… আমরা সাতদিন চেয়েছিলাম যাতে ফাস্ট ট্রাক কোর্টের মধ্যে দিয়ে অভিযুক্তের ফাঁসি করে দেব। আমরা বিচারের দাবি চাইব।আমি জাজ নিয়ে বলতে চাই না। জাজমেন্ট নিয়ে বলার অধিকার আছে। একজন আইনজীবী হিসাবে প্রশ্ন করছি, মহারাষ্ট্রের কোর্ট বনধকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে পারে। সেখানকার বিরোধী দল বনধ ডেকেছিল। মহারাষ্ট্র কোর্ট নিষিদ্ধ বলল। কেরল হাইকোর্ট তার আগে বনধকে নিষিদ্ধ করেছে। কলকাতা হাইকোর্ট আমি শুনেছি সাধারণ মানুষ জনস্বার্থ মামলা করেছিল। আপনাদের উচিৎ ছিল না নড়েচড়ে বসার? আমি আইনজীবীদের বলব, বিজেপিকে এই জায়গাটা ছেড়ে দেবেন না। মানুষ কোর্টে গিয়ে যেন বিচার পায় সেই জায়গাটা দেখবেন।এত তাড়াহুড়ো কীসের? কয়েকদিন আগেই তো উপ নির্বাচন হয়ে গেল। গো হারা হেরে লজ্জা নেই? ওটা তোমাদের আসন ছিল। সারা ভারতে কোথাও জিতবে না ওরা।কালকে ছবিতে দেখেছি। ডেডবডি নিতে এসেছিল কাল। পুলিশ সংযত ছিল। পুলিশের কারও মাথা ফাটিয়েছে, চোখ কেড়ে নিয়েছে। তাও পুলিশকে আমি স্যালুট জানাই। ওরা সংযত থেকে নিজের রক্ত দিয়েছে। তবুও বিজেপির চক্রান্তের কাছে কারও ডেডবডি তুলে দেয়নি।আমিও ছাত্র রাজনীতি করেছি। আমরা বনধের রাজনীতি বিশ্বাসী নই। বনধ কীসের? কাকে নিয়ে বনধ? বনধ করলে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে করো। যিনি আজ পর্যন্ত শুধু এজেন্সি লাগিয়ে মানুষের উপর অত্যাচার করা ছাড়া, যিনি আজ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ-রাজস্থান-মণিপুর-অসমের ঘটনায় পদত্যাগ করেননি।আজ যখন আমাদের ছেলেমেয়েরা আসছিল বাস ভাঙচুর করা হয়েছে। পুলিশকে মারধর করা হয়েছে। রেলের সিগনাল ইচ্ছা করে বন্ধ করেছে। এখানে সিবিআই-ইডি সব বিজেপি করে। ওরা চালায়। আমি কোনও দিন এমন কেন্দ্রীয় সরকার দেখিনি। বিজেপি দলদাসের সরকার। এদের মতো নির্লজ্জ, কুৎসাকারী, চক্রান্তকারী আমি কোনওদিন দেখিনি।আজ বিজেপি জেনে শুনে বনধ ডেকেছে। কারণ ওদের ডেডবডি চাই। আমরা শান্তি চাই। আমরা দোষীর শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই। আর ওরা আসল আন্দোলনে জল ঢেলে চক্রান্তের খেলায় নেমেছে। বাংলাকে বদনামের খেলায় নেমেছে। আমি ধিক্কার জানাই।আজকের দিনটা ডেডিকেট করতে চাই সমাজে যাঁরা নির্যাতিত হয়েছেন তাঁদের। বিশেষ করে আরজি করে আমার প্রিয় বোনটি যেভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। এই কদিনে মহারাষ্ট্রে শিশুদের উপর অত্যাচার হয়েছে। রাজস্থান-বিহার-মণিপুর-অসম অত্যাচার হয়েছে। এই দিনটি সকল নির্যাতিতাদের উৎসর্গ করছি।"