মমতার আশ্বাস, ফিরহাদের সুর
এর আগে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করেছেন, বাংলায় ওয়াকফ আইন কার্যকর হবে না। তিনি সংখ্যালঘু সমাজকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, “দিদি আপনাদের সম্পত্তি রক্ষা করবে। বাংলায় এমন কিছু হবে না যাতে বিভাজন সৃষ্টি হয়।” একই সুরে কথা বলেছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। মেদিনীপুরে একটি বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, “বাংলায় ওয়াকফ নয়।” কিন্তু এত আশ্বাসের পরেও সংখ্যালঘু সমাজের মধ্যে ভয় ও অস্থিরতা কাটেনি। জঙ্গিপুর থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষিপ্ত প্রতিবাদ, সংঘর্ষ ও অশান্তির ঘটনা ঘটছে। সম্পত্তি ‘খোয়ানোর’ আশঙ্কায় অনেকেই উদ্বিগ্ন।
রামলীলা ময়দানে সম্প্রীতির বার্তা
রামলীলা ময়দানের সভায় সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী কেবল ওয়াকফ আইনের বিরোধিতাই করেননি, সম্প্রীতির বার্তাও দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওয়াকফ আইনের কথা শুনেই মানুষের মাথা গরম হয়ে গেছে। কিন্তু আমি বলব, আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। এমন কিছু করবেন না যাতে অন্যের মনে আঘাত লাগে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকার মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পত্তি হাতানোর পর অন্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সম্পত্তির দিকেও হাত বাড়াবে।
সংখ্যালঘুদের ঐক্যের ডাক
সিদ্দিকুল্লা শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ের কথাই বলেননি, অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিও সংহতি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “শিখদের প্রাণ স্বর্ণমন্দির। কাল যদি এর উপর হামলা হয়, আমরা কি তাদের পাশে দাঁড়াব না? এখন শোনা যাচ্ছে, খ্রিস্টানদের পালা। তাদেরও দেশজুড়ে অনেক সম্পত্তি রয়েছে। কিন্তু কাল যদি তাদের উপর আঘাত আসে, আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করব।” তাঁর এই বক্তব্যে স্পষ্ট, তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের উপর জোর দিচ্ছেন।
প্রতিবাদের পথে সংখ্যালঘু সংগঠন
রামলীলা ময়দানের এই সভা ছিল সংখ্যালঘু সংগঠনগুলির একটি বড় পদক্ষেপ। ওয়াকফ আইনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ আরও জোরালো করার পরিকল্পনা রয়েছে। সিদ্দিকুল্লার নেতৃত্বে ১ কোটি সই সংগ্রহের উদ্যোগ এই প্রতিবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এই ইস্যুতে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
উপসংহার
ওয়াকফ আইন নিয়ে বাংলার সংখ্যালঘু সমাজের মধ্যে যে উত্তেজনা ও আশঙ্কা রয়েছে, তা রামলীলা ময়দানের সভায় আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। সিদ্দিকুল্লা চৌধুরীর বক্তব্যে একদিকে যেমন প্রতিবাদের দৃঢ়তা ফুটে উঠেছে, তেমনই সম্প্রীতি ও ঐক্যের বার্তাও উঠে এসেছে। এই ইস্যুতে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন আরও তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সামনের দিনগুলিতে এই আন্দোলন কী রূপ নেয়, সেদিকে নজর রাখছে গোটা বাংলা।