প্রয়াত হলেন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী এবং বিশিষ্ট বামপন্থী নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
শুক্রবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড়ের বাকড়ি গ্রামে নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন এবং সক্রিয় রাজনীতি থেকে একপ্রকার দূরেই ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ রাজ্যের রাজনৈতিক মহল।
রেজ্জাক মোল্লার রাজনৈতিক যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৭৭ সালে, বামফ্রন্টের উত্থানের সময়। ক্যানিং পূর্ব কেন্দ্র থেকে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে তিনি রাজ্য বিধানসভায় প্রবেশ করেন। এরপর টানা ৩৪ বছর ওই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন। এমনকি ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের সময়েও ক্যানিং পূর্ব ছিল রেজ্জাকের দখলে।
দীর্ঘ রাজনৈতিক কেরিয়ারে তিনি রাজ্য মন্ত্রিসভায় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দপ্তরের দায়িত্ব সামলেছেন দক্ষতার সঙ্গে। একসময় সিপিএম-এর গুরুত্বপূর্ণ নেতা হিসেবে পরিচিত হলেও ২০১৪ সালে দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করে সিপিএম। এরপর নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন একটি নতুন রাজনৈতিক দল—‘ভারতীয় ন্যায়বিচার পার্টি’। নিজেকে পরিচয় দিতেন 'চাষার ব্যাটা' বলে, যা হয়ে উঠেছিল তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়ের অন্যতম দিক।
তবে এই দল বেশিদিন সক্রিয় থাকেনি। ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন রেজ্জাক মোল্লা এবং ভাঙড় কেন্দ্র থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। সেই মেয়াদে তিনি রাজ্যের খাদ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দপ্তরের দায়িত্ব পান।
তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সম্পর্ক একসময় ঘনিষ্ঠ থাকলেও, বয়সজনিত কারণে ২০২১ সালের নির্বাচনে তাঁকে আর প্রার্থী করেনি দল। সেখান থেকেই রাজনীতির ময়দান থেকে ক্রমশ দূরে সরে যান রেজ্জাক মোল্লা।
তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এক্স (প্রাক্তন টুইটার)-এ পোস্ট করে তিনি লেখেন, “একসময় অন্য ধারার রাজনীতি করলেও, মা-মাটি-মানুষের সরকারে তাঁর মিলিত হয়ে যাওয়া ছিল সহজ ও স্বাভাবিক।”
শেষ জীবনে গৃহবন্দি অবস্থায় থাকলেও, বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে তাঁর মন্তব্য মাঝেমধ্যেই আলোড়ন তুলত। রেজ্জাক মোল্লার প্রয়াণে নিভে গেল এক সাহসী, স্পষ্টভাষী ও দীর্ঘস্থায়ী রাজনৈতিক যাত্রার আলো। রাজ্য রাজনীতির ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।