পহেলগাঁওয়ে নৃশংস জঙ্গি হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রবিবার ‘মন কী বাত’ অনুষ্ঠানে জাতির উদ্দেশে শক্ত বার্তা দিলেন। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে সংঘটিত হামলায় ২৬ জন নিহত ও বহু মানুষ আহত হন। এই ঘটনার পর থেকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই মোদী পহেলগাঁও হামলায় নিহতদের প্রতি গভীর শোকপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "আমি নিহতদের পরিবারগুলিকে আশ্বস্ত করতে চাই, ন্যায় নিশ্চিত করব। ষড়যন্ত্রকারী ও হামলাকারীদের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।" তিনি আরও জানান, এই নির্মম হামলা প্রত্যেক ভারতবাসীর রক্ত ফুটিয়ে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, শান্তির পথে এগোতে থাকা কাশ্মীরকে অশান্ত করতে এই হামলা চালানো হয়েছে। যখন জম্মু ও কাশ্মীরে গণতন্ত্র মজবুত হচ্ছিল, স্কুল-কলেজ খুলছিল, তখন দেশের শত্রুরা এই ষড়যন্ত্র করেছে। মোদী বলেন, ‘‘এটি জঙ্গিদের ভীতু মনোভাবেরই প্রতিফলন।’’
একই সঙ্গে মোদী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোটা দেশকে একজোট হওয়ার বার্তা দেন। তাঁর কথায়, "১৪০ কোটি ভারতীয়ের ঐক্যই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি। গোটা বিশ্ব দেখছে এই হামলার পর ভারত কিভাবে একসঙ্গে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে সমবেদনা এবং সমর্থনের বার্তা আসছে।"
পহেলগাঁও কাণ্ডের পর মোদী সৌদি আরব সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন। দিল্লিতে অবতরণের পরই জরুরি বৈঠক করেন তিনি। তাঁর নির্দেশেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জম্মু-কাশ্মীরে গিয়ে রাজ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। ইতিমধ্যেই সেনা, আধাসেনা এবং রাজ্য পুলিশের যৌথ চিরুনি তল্লাশি চলছে উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে। বহু জঙ্গি আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
ভারত সরকারের তরফ থেকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে সিন্ধু জলচুক্তি, বন্ধ করা হয়েছে অটারী সীমান্তের ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট। বৈধ নথিপত্র থাকা পাকিস্তানি নাগরিকদের ১ মে’র মধ্যে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানিদের সার্ক ভিসা বাতিল করা হয়েছে। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তানও ভারতের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে আছে আকাশসীমা বন্ধ এবং শিমলা চুক্তি বাতিলের হুমকি।
ভারত এখন কড়া হাতে জঙ্গি দমনের পথে এগোচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী দৃঢ় ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, পহেলগাঁও হামলার ষড়যন্ত্রকারীদের ‘কল্পনাতীত শাস্তি’ দেওয়া হবে।