তৃণমূলের সংসদীয় দলে ‘গৃহযুদ্ধ’, কেন্দ্রে কল্যাণ-মহুয়া দ্বন্দ্ব

নিজস্ব প্রতিবেদন |  নয়াদিল্লি, ৮ এপ্রিল — তৃণমূল কংগ্রেসের সংসদীয় দলে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ একেবারে প্রকাশ্যে। হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ থেকে শুরু করে সাংবাদিক সম্মেলন— দলীয় ভাঙনের ঢেউ পৌঁছে গিয়েছে জনসমক্ষে। প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন কৃষ্ণনগরের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। পাল্টা কল্যাণও কড়া আক্রমণ হেনেছেন মহুয়াকে লক্ষ্য করে। যোগ দিয়েছেন আরও দুই সাংসদ— সৌগত রায় ও কীর্তি আজ়াদ।

ঘটনার সূত্রপাত কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনে তৃণমূলের তরফে স্মারকলিপি জমা দেওয়াকে কেন্দ্র করে। অভিযোগ, সেই প্রতিনিধিদলে থাকা সত্ত্বেও স্মারকলিপিতে মহুয়া মৈত্রর নাম ছিল না, যদিও তাঁকে সেখানে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলেন মহুয়া, এবং এরপর দিল্লিতে প্রকাশ্য বিতণ্ডা বাধে কল্যাণ ও মহুয়ার মধ্যে। অভিযোগ, কমিশনের দফতরের বাইরে কল্যাণ ‘অপশব্দ’ ব্যবহার করেন, নিরাপত্তা চেয়ে মহুয়া বিএসএফ জওয়ানদের কাছে আর্জি জানান— “এই লোকটাকে গ্রেফতার করুন!”

এরপর থেকেই পরিস্থিতি ক্রমে ঘোলাটে হয়ে ওঠে। সোমবার রাতেই বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য কিছু ভিডিও ও হোয়াটসঅ্যাপ স্ক্রিনশট প্রকাশ্যে আনেন, যেখানে দেখা যায় কল্যাণ ও কীর্তির নাম। মঙ্গলবার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে প্রকাশ্যে নাম করে কীর্তি আজ়াদ ও সৌগত রায়কে আক্রমণ করেন, এবং ‘এক মহিলা সাংসদ’-এর বিরুদ্ধে কটাক্ষ করেন, যদিও নাম উচ্চারণ করেননি।

কল্যাণ বলেন, “নারদার চোর আর এর-তার থেকে গিফ্‌ট-নেওয়া সমস্ত দু’নম্বরিগুলো এক জায়গায় হয়েছে।” সৌগত রায়ের বিরুদ্ধে তোপ দেগে তিনি বলেন, “ওর কোনও ক্যারেক্টার নেই। নারদার টাকা নিয়েছিল, মনে নেই?”

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে সৌগত রায় বলেন, “নিশ্চয়ই এমন কিছু হয়েছে, যা ওই মহিলা সাংসদকে অসম্মানিত করেছে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”

কল্যাণের অভিযোগ, কীর্তি আজ়াদ একটি বেসরকারি মিষ্টির দোকানের জন্য নতুন সংসদ ভবনের ক্যান্টিনে জায়গা দিতে সাংসদদের দিয়ে সই করাচ্ছিলেন। কল্যাণ বাধা দিলে, কীর্তি ক্ষুব্ধ হন ও পরে সেই ভিডিও ফাঁস করেন বলেই তাঁর অভিযোগ।

তৃণমূল শিবির সূত্রে জানা গিয়েছে, মহুয়া ইতিমধ্যেই দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। সেই চিঠি কালীঘাটে পৌঁছনোর পরে সাংবাদিক সম্মেলনে কল্যাণের এই ভাষ্য, রাজনৈতিক মহলে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন, এই ‘গৃহযুদ্ধ’-এর নিষ্পত্তি কীভাবে হবে? দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী পদক্ষেপ নেবেন? আপাতত তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ ঘিরে জল্পনার পারদ চড়ছে দিল্লি থেকে কলকাতা পর্যন্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Type Your Valuable Feedback.
Keep Supporting. Flow as on YouTube & Facebook.

নবীনতর পূর্বতন