নিজস্ব প্রতিবেদন: মুম্বই, ৭ এপ্রিল: বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তি মুকেশ আম্বানির বিলাসবহুল বাসভবন ‘অ্যান্টিলিয়া’ ঘিরে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মহারাষ্ট্র রাজ্য ওয়াক্ফ বোর্ড এই বাড়িটিকে ‘ওয়াক্ফ সম্পত্তি’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে, যা নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও আইনি জটিলতা।
বলা হচ্ছে, অ্যান্টিলিয়া যেই জমির ওপর নির্মিত, সেটি আসলে পূর্বে একটি ইসলামিক ট্রাস্ট — ‘কুরেশি নুরবখশ ট্রাস্ট’-এর মালিকানাধীন ছিল। ২০০২ সালে ওই জমি বিক্রি হয় রিয়েল এস্টেট সংস্থা বীচ ক্রফট ডেভেলপার্সকে। পরবর্তীতে এটি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মাধ্যমে মুকেশ আম্বানির হাতে আসে।
তবে মহারাষ্ট্র ওয়াক্ফ বোর্ডের দাবি, জমিটির নথিপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে এটি একটি ওয়াক্ফ সম্পত্তি — অর্থাৎ, ধর্মীয় বা জনকল্যাণমূলক কাজে ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত ইসলামি সম্পদ। সেই অনুযায়ী, এই সম্পত্তি নিয়ে যে কোনও বাণিজ্যিক ক্রয়-বিক্রয় অবৈধ।
ওয়াক্ফ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও দেউ-বল্লা মজারার মহারাজি বিধানসভাতেও বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে। বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, তারা শিগগিরই এই সম্পত্তির দখল নেওয়ার চেষ্টা করবে এবং যদি প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হতেও পিছপা হবে না।
বিলাসের প্রতীক ‘অ্যান্টিলিয়া’
২০০৬ সালে নির্মাণ শুরু এবং ২০১০ সালে নির্মাণ শেষ হওয়া এই ২৭ তলা ভবনটি ৪ লক্ষ বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। ভবনটির বাজার মূল্য আনুমানিক ২.৫ বিলিয়ন ডলার। এতে রয়েছে তিনটি হেলিপ্যাড, ১৬০টি গাড়ি রাখার গ্যারেজ, প্রাইভেট থিয়েটার, সুইমিং পুল, স্পা, মন্দির এবং বরফের ঘর সহ একাধিক বিলাসবহুল সুবিধা।
বর্তমানে এটি শুধু ভারতের নয়, বিশ্বের অন্যতম দামী ব্যক্তিগত বাসভবন হিসেবে পরিচিত।
আইনি লড়াইয়ের সম্ভাবনা
ওয়াক্ফ বোর্ড ইতিমধ্যেই জানিয়েছে, তারা জমির মালিকানা নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। অন্যদিকে, আম্বানি পরিবার এখনও এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বিষয়টি আদালতে গড়ালে একটি দীর্ঘস্থায়ী আইনি প্রক্রিয়ার সূচনা হতে পারে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, এত বছর পর হঠাৎ এই জমিকে ওয়াক্ফ সম্পত্তি ঘোষণার নেপথ্যে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে।
উপসংহার
'অ্যান্টিলিয়া' আজ কেবল একটি বাড়ি নয়, বরং ভারতের কর্পোরেট শক্তি ও বিলাসিতার প্রতীক। এই বাড়িকে ঘিরে ওয়াক্ফ বোর্ডের এই সিদ্ধান্ত শুধু আম্বানি পরিবার নয়, পুরো দেশের আইনি ও সামাজিক পরিসরে একটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
Tags
নিউজ ডেস্ক