সেখ জাবিহুল্লাহ : ১৫ই এপ্রিল, ২০২৫:
দিনটি শুধু বাংলা ১৪৩২ সালের প্রথম দিন নয়, পাশাপাশি এটি ছিল পশ্চিমবঙ্গ দিবস—এক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বসম্পন্ন মুহূর্ত। এই বিশেষ দিনে ডানকুনি শহরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ড এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করল সম্প্রীতি, ঐক্য ও সাংস্কৃতিক চেতনার এক সুন্দর মিলনে।
সকালের প্রথম আলো ফুটতেই শুরু হয় প্রভাত ফেরী। ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত স্থানীয় মানুষজন, শিশু-কিশোর, প্রবীণ নাগরিক এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সদস্যরা একত্রিত হন এই আয়োজনকে ঘিরে। প্রভাত ফেরীর শুরু থেকেই শহরের অলিগলি জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে উৎসবের আমেজ, বাউল গানের সুর, ঢাকের বাদ্য আর একতার বার্তা।
বিশেষ নজর কেড়েছে হিন্দু ও মুসলিম শিশুদের একসাথে হাতে হাত রেখে মিছিলে হাঁটা—যা বর্তমান সমাজে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক চিরস্মরণীয় প্রতীক হয়ে রইল। উৎসবে অংশগ্রহণকারী সবাই এক বাক্যে স্বীকার করেছেন, এই প্রভাত ফেরী ছিল কেবলমাত্র নববর্ষ উদ্যাপনের বাহক নয়, বরং এটি ছিল আমাদের বহু জাতি-ধর্মের মানুষের মিলনের এক জীবন্ত উদাহরণ।
বাউল শিল্পীদের মরমি গান, লোকসংগীত, আবৃত্তি ও পথনাটকের মাধ্যমে বাংলার মাটির সুর, ভাষা ও সংস্কৃতির সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে গোটা অঞ্চলে। পথচলতি মানুষজন থমকে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন এই মনোজ্ঞ পরিবেশনা। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্তরের মানুষ এই আয়োজনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন, এবং দিনটিকে স্মরণীয় করে তোলেন।
এই সফল আয়োজনের জন্য ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের স্থানীয় প্রশাসন ও সামাজিক সংগঠনগুলির ভূমিকাও প্রশংসনীয়। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনুষ্ঠানটি শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও হৃদয়গ্রাহী হয়।
আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “আজকের এই অনবদ্য অংশগ্রহণ আমাদের মুগ্ধ করেছে। ডানকুনিবাসীর এই ভালোবাসা এবং সমর্থনই আমাদের আগামী দিনে আরও বৃহত্তর পরিসরে সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির অনুষ্ঠান আয়োজন করতে উদ্বুদ্ধ করবে।”
শেষে, অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে জানানো হয় আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা। বাংলা নববর্ষের শুভক্ষণে ডানকুনি শহর প্রমাণ করে দিল—এই মাটি শুধু ইতিহাস আর সংস্কৃতির, তা নয়; এই মাটি মিলনের, মমতার এবং একতার প্রতীক।