কলকাতা, ৯ এপ্রিল ২০২৫: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে এক ধাক্কায় প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি চলে যাওয়ার ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের রাজপথ। পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদে আজ, বৃহস্পতিবার, চাকরিহারারা রাস্তায় নামছেন। ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর ডাকে দুপুর ১২টায় শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মহামিছিলের আয়োজন করা হয়েছে। এই মিছিলে শুধু চাকরিহারা শিক্ষকরাই নন, শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, ডাক্তার, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদেরও সংহতি জানাতে আহ্বান করা হয়েছে।
#### কী ঘটেছিল কসবায়?
গত বুধবার কসবার ডিআই অফিসের সামনে চাকরিহারাদের বিক্ষোভের সময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ উঠেছে, নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ নির্বিচারে লাঠিচার্জ করেছে। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন নিরস্ত্র মানুষের ওপর এমনভাবে পুলিশি হামলা চালানো হল? ঘটনার তীব্রতা এতটাই বেড়ে যায় যে, কলকাতার পুলিশ সুপার মনোজ ভার্মা নবান্ন থেকে বলতে বাধ্য হন, “অন রেকর্ড বলছি, এটা ঠিক হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ঘটনার আগে-পরের সব ফুটেজ পরীক্ষা করা হচ্ছে।”
#### রাতভর অবস্থান, পথই পথ দেখাবে
বুধবার রাতে চাকরিহারাদের একটি অংশ এসএসসি ভবনের সামনে রাত জেগে অবস্থান করেন। তাঁদের বক্তব্য স্পষ্ট—‘পথই পথ দেখাবে।’ তাঁরা জানিয়েছেন, এসএসসিকে যোগ্য ও অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে, কারণ এসএসসি এখানে রেকমেন্ডিং বডি। একই সঙ্গে তাঁরা বলেন, “শিক্ষকদের গায়ে হাত পড়েছে। যেখানে যা প্রতিবাদ হবে, সেটা সকলের প্রতিবাদ।”
#### আগামীর পরিকল্পনা
আজকের মহামিছিলের পর শুক্রবার চাকরিহারারা এসএসসি ভবন অভিযানের ডাক দিয়েছেন। সেখান থেকে তাঁরা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ডাকা বিকাশ ভবনের বৈঠকে যোগ দেবেন। তাঁদের দাবি, এই সংকটের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
#### কেন এই সংকট?
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২৬ হাজার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের ঘটনা এই আন্দোলনের মূল কারণ। চাকরিহারারা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্তে যোগ্য-অযোগ্যের বিচার সঠিকভাবে হয়নি। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, এসএসসি কীভাবে এই তালিকা তৈরি করল, এবং কেন তাঁদের কথা শোনা হল না?
#### সমাজের সব স্তরের সমর্থন
এই আন্দোলন শুধু শিক্ষকদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ—শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক থেকে শিক্ষাবিদ—এই প্রতিবাদে শামিল হওয়ার আহ্বানে সাড়া দিচ্ছেন। এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রশাসনের উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
আগামী দিনে এই আন্দোলন কোন দিকে মোড় নেবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে চাকরিহারারা জানিয়েছেন, অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা পিছু হটবেন না।