কলকাতা, ২২ এপ্রিল ২০২৫: পশ্চিমবঙ্গের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) অফিসের সামনে গতকাল রাতভর চলেছে উত্তপ্ত বিক্ষোভ। চাকরি হারানো শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের ক্ষোভের আগুনে জ্বলেছে কলকাতার করুণাময়ী এলাকা। এসএসসি-র চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের জন্য আনা চায়ের ভাঁড় ভেঙে ফেলা থেকে শুরু করে বিরিয়ানি ও পিৎজার প্যাকেট নষ্ট করা—বিক্ষোভকারীদের আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়েছে।
🛑 SSC আন্দোলনের সারাংশ (২২ এপ্রিল ২০২৫)
-
আন্দোলনের সূত্রপাত:
-
সোমবার (২১ এপ্রিল) দুপুর থেকে শুরু হয় চাকরিহারাদের ধর্ণা।
-
দাবি: হকের চাকরি না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
-
-
চেয়ারম্যানের ভূমিকা:
-
আন্দোলনকারীদের অনুরোধ সত্ত্বেও SSC চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদার একবারও বাইরে আসেননি।
-
অফিসের ভিতরেই ছিলেন তিনি ও অন্যান্য আধিকারিকরা।
-
-
রাতভর অবস্থান:
-
আন্দোলনকারীরা রাস্তায় রাত কাটান।
-
অভিযোগ: তাঁদের জন্য জল বা শৌচাগারের ব্যবস্থাও রাখা হয়নি।
-
-
চায়ের ঘটনায় ক্ষোভ:
-
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ চেয়ারম্যানের জন্য চা আনা হয়।
-
সেটা দেখে বিক্ষোভকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে চায়ের মাটির ভাঁড় ভেঙে দেন।
-
-
খাবার ঢোকানো নিয়েও ক্ষোভ:
-
SSC অফিসে বাইরে থেকে পিৎজা ও বিরিয়ানি আনা হচ্ছিল।
-
বিক্ষোভকারীরা তা দেখে ছিনিয়ে তছনছ করেন।
-
-
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য:
-
“আমরা রাস্তায়, তারা ভিতরে আরামে! জল পর্যন্ত পাইনি।”
-
“আমরা ন্যায্য চাকরি না পেলে ফিরব না।”
-
-
বর্তমান পরিস্থিতি:
-
এলাকা জুড়ে পুলিশি নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
-
এখনও পর্যন্ত SSC-র পক্ষ থেকে কোনও আলোচনার উদ্যোগ নেই।
-
বিক্ষোভের পটভূমি
২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে প্রায় ২৫,৭৫৩ জন শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীর চাকরি বাতিল হয়। এই রায়ের পর থেকেই চাকরিহারারা ন্যায্য বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমেছেন। তারা দাবি করছেন, যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের তালিকা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হোক এবং ২২ লক্ষ প্রার্থীর ওএমআর শিটের প্রতিলিপি সর্বজনীন করা হোক। গত ২১ এপ্রিল এই তালিকা প্রকাশের কথা থাকলেও, নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও তালিকা প্রকাশিত হয়নি, যা বিক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে।
চায়ের ভাঁড় ভাঙা ও খাবার নষ্ট
গতকাল সকালে এসএসসি চেয়ারম্যানের জন্য চা আনা হলে বিক্ষোভকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা চায়ের ভাঁড় ভেঙে ফেলেন এবং বলেন, “আমাদের তো একটু জলও জুটছে না, আর এখানে চা-বিরিয়ানি খাওয়ার আয়োজন চলছে!” এর আগে রাতে এসএসসি ভবনে বিরিয়ানি ও পিৎজার প্যাকেট আনা হলে বিক্ষোভকারীরা সেগুলোও নষ্ট করে দেন। এই ঘটনা বিক্ষোভের তীব্রতা এবং চাকরিহারাদের মনে জমে থাকা ক্ষোভের প্রকাশ।
রাতভর আন্দোলন ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ
গতকাল রাতে বিক্ষোভকারীরা এসএসসি অফিস ঘিরে ফেলে। তেরো জনের একটি প্রতিনিধি দল আচার্য ভবনে চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রবেশ করলেও কোনো ফলপ্রসূ সমাধান না পাওয়ায় বিক্ষোভ আরও তীব্র হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। শিক্ষিকারা অভিযোগ করেছেন, পুরুষ পুলিশ সদস্যরা তাদের কনুই দিয়ে গুঁতো মেরেছে। এই ঘটনায় পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
দাবি ও প্রতিক্রিয়া
বিক্ষোভকারীদের প্রধান দাবি হলো সম্পূর্ণ তালিকা প্রকাশ এবং নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা। তারা বলছেন, “আমরা রাতভর এখানে বসে থাকব, যতক্ষণ না তালিকা প্রকাশিত হয়। চেয়ারম্যানকেও বাড়ি যেতে দেব না।” এছাড়াও তারা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এবং এসএসসি চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মজুমদারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছেন।
কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ ভার্মা এবং মুখ্যসচিব মনোজ পান্ত বিক্ষোভকারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। পান্ত বলেন, “সরকার তাদের পাশে আছে। আমরা তাদের ব্যথা বুঝি। তবে শান্তি বজায় রাখতে হবে।” তবে বিক্ষোভকারীরা স্পষ্ট জানিয়েছেন, তালিকা প্রকাশ না হলে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
আইনি পদক্ষেপ
কলকাতা হাইকোর্টে এই বিষয়ে একটি অভিযোগ পিটিশনের শুনানি হয়েছে। বিচারপতি দেবাংশু বসাক এবং মোহাম্মদ শব্বর রশিদি এসএসসি-র কাছে জানতে চেয়েছেন, কেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে না। আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে।
উপসংহার
এসএসসি-র নিয়োগ কেলেঙ্কারি এবং চাকরি হারানো শিক্ষক-কর্মীদের আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি গভীর সংকটের দিকে ইঙ্গিত করছে। চাকরিহারাদের ক্ষোভ, রাতভর বিক্ষোভ এবং চায়ের ভাঁড় ভাঙার মতো ঘটনা এই আন্দোলনের তীব্রতা প্রকাশ করছে। সরকার এবং এসএসসি কর্তৃপক্ষ কীভাবে এই সংকটের সমাধান করে, তা আগামী দিনে শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় প্রভাব ফেলবে।