ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫: সংসদের দুই কক্ষে পাশ, প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা

নয়াদিল্লি, ৪ এপ্রিল: ভারতের সংসদে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইল দেশ। লোকসভায় পাশ হওয়ার পর রাজ্যসভাতেও পাশ হয়ে গেল ‘ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫’। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সংসদের উচ্চকক্ষে এই বিল পাশ হওয়ার পরই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একে ‘আর্থ-সামাজিক ন্যায়বিচারের লক্ষ্যে এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত’ বলে বর্ণনা করেন।


প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া

বর্তমানে থাইল্যান্ডে বিমস্টেক সম্মেলনে যোগ দিতে থাকা প্রধানমন্ত্রী মোদী শুক্রবার সকালে সমাজমাধ্যমে এক পোস্টে এই বিলের পাশ হওয়াকে স্বাগত জানান। তিনি লেখেন, ‘‘সংসদের দুই কক্ষে ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার ঘটনা আর্থ-সামাজিক ন্যায়বিচার, স্বচ্ছতা এবং সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে এক অভূতপূর্ব মুহূর্ত।’’

তিনি আরও জানান, এই নতুন আইন সেই সমস্ত প্রান্তিক এবং বঞ্চিত মানুষদের সাহায্য করবে, যারা এতদিন ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন। বিল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও বিতর্কের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘‘ওয়াকফ ব্যবস্থার স্বচ্ছতার অভাব বহু দশক ধরে গরিব মুসলমান, বিশেষ করে মুসলিম নারী এবং পসমন্দা মুসলমানদের ক্ষতি করেছে। এই বিল স্বচ্ছতা বাড়াবে এবং মানুষের অধিকার রক্ষা করবে।’’

সংসদে দীর্ঘ বিতর্ক ও ভোটাভুটি

বুধবার গভীর রাতে লোকসভায় দীর্ঘ আলোচনার পর পাশ হয় ‘ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫’। লোকসভায় এই বিলের পক্ষে ভোট দেন ২৮৮ জন সাংসদ, আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ২৩২টি। এরপর বৃহস্পতিবার গভীর রাতে রাজ্যসভায় এই বিল পেশ করেন সংসদীয় বিষয়ক এবং সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেণ রিজিজু।

রাজ্যসভায় বিতর্ক চলে টানা ১২ ঘণ্টারও বেশি। বিল পাশের প্রস্তাব পেশ করা হয় রাত ২টো ১৯ মিনিটে। বিরোধীরা ধ্বনিভোটের ফলাফলে সন্তুষ্ট না হয়ে বিভাজন ভোট (ডিভিশন) দাবি করেন। অবশেষে রাত ২টো ৩৪ মিনিটে ভোটাভুটি শেষে ফল ঘোষিত হয়, যেখানে বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৮টি এবং বিপক্ষে ৯৫টি। ৩৩ ভোটের ব্যবধানে রাজ্যসভায় পাশ হয়ে যায় বিলটি।

আইনে পরিণত হওয়ার অপেক্ষা

বিলটি এবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর মিললেই এটি আইনে পরিণত হবে এবং ৭০ বছরের পুরনো ওয়াকফ আইন বদলে যাবে। সরকার আশা করছে, এই সংশোধনী আইন ওয়াকফ সম্পত্তি সংক্রান্ত যাবতীয় সমস্যার সমাধান করবে এবং সমাজের প্রান্তিক অংশের মানুষের স্বার্থ রক্ষা করবে।

এই ঐতিহাসিক মুহূর্ত নিয়ে রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীরা যদিও বিলের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান বজায় রেখেছেন, তবে সরকার পক্ষের মতে, এই আইন দেশে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Please Type Your Valuable Feedback.
Keep Supporting. Flow as on YouTube & Facebook.

নবীনতর পূর্বতন